চর্মরোগ হলে কি কি খাওয়া নিষেধ - মাথায় সোরিয়াসিস থেকে মুক্তির উপায়
চর্মরোগ হলে কি কি খাওয়া নিষেধ - মাথায় সোরিয়াসিস থেকে মুক্তির উপায় এই আর্টিকেল থেকে জেনে নিতে পারেন এছাড়া আজকে আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করব চর্মরোগ হলে কি কি খাওয়া নিষেধ - মাথায় সোরিয়াসিস থেকে মুক্তির উপায় আজকের এই আর্টিকেলটি আপনি যদি মনোযোগ সহকারে পড়েন চর্মরোগ হলে কি কি খাওয়া নিষেধ - মাথায় সোরিয়াসিস থেকে মুক্তির উপায় শুধুমাত্র একটি পোস্ট থেকে জেনে নিতে পারবেন ।
চর্মরোগ হলে কি কি খাওয়া নিষেধ - মাথায় সোরিয়াসিস থেকে মুক্তির উপায়
এই আর্টিকেলটি আপনি মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে চর্মরোগ হলে কি কি খাওয়া নিষেধ - মাথায় সোরিয়াসিস থেকে মুক্তির উপায় সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়লে আর কোন প্রশ্ন থাকবে না ।
সোরিয়াসিস থেকে মুক্তির উপায় :
সোরিয়াসিস (Psoriasis) একটি দীর্ঘস্থায়ী ত্বকের রোগ, যার কোনও স্থায়ী চিকিৎসা নেই। তবে উপযুক্ত চিকিৎসা এবং জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে এর উপসর্গগুলি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সোরিয়াসিস থেকে মুক্তির জন্য কিছু পরামর্শ:
১. চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন:
* ক্রীম বা মলম: কোরটিকোস্টেরয়েড ক্রীম, ভিটামিন ডি অ্যানালগ, রেটিনয়েড, স্যালিসাইলিক অ্যাসিড ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন।
* মৌখিক ওষুধ: যদি আপনার সোরিয়াসিস গুরুতর হয়, তবে চিকিৎসক মৌখিক ওষুধ যেমন মেথোট্রেক্সেট বা সাইক্লোস্পোরিন লিখে দিতে পারেন।
* জৈবিক থেরাপি: এটি সাধারণত ইনজেকশনের মাধ্যমে দেওয়া হয় এবং এটি সোরিয়াসিসকে নিয়ন্ত্রণে আনতে সহায়ক।
২. ফোটোথেরাপি:
* আলোর থেরাপি বা UVB ফোটোথেরাপি সোরিয়াসিসের চিকিত্সার একটি বিকল্প হতে পারে। এটি চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে করতে হয়।
৩. ত্বক আর্দ্র রাখা:
* ত্বককে আর্দ্র রাখতে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। শুষ্ক ত্বক সোরিয়াসিসকে আরও খারাপ করতে পারে।
৪. স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ:
* স্ট্রেস সোরিয়াসিসকে আরও খারাপ করতে পারে, তাই ধ্যান, যোগব্যায়াম, এবং শ্বাসের ব্যায়াম করে স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
৫. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস:
* ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাদ্য, যেমন মাছের তেল, স্যালমন, চিয়া বীজ ইত্যাদি গ্রহণ করতে পারেন।
* সুষম খাদ্য গ্রহণ এবং মদ্যপান ও ধূমপান এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।
৬. নিয়মিত চর্ম বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন:
* সোরিয়াসিসের চিকিৎসা সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হতে পারে, তাই নিয়মিত চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
৭. ধৌত ও সাবান নির্বাচন:
* মৃদু সাবান এবং হালকা উষ্ণ জল ব্যবহার করুন। খুব গরম জল বা কড়া সাবান ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
৮. ওজন নিয়ন্ত্রণ:
* অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা সোরিয়াসিসের উপসর্গকে খারাপ করতে পারে। স্বাস্থ্যকর ডায়েট এবং নিয়মিত ব্যায়াম এর মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
৯. সংক্রমণ প্রতিরোধ:
* যেহেতু সোরিয়াসিসের কারণে ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাই সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। ত্বকের কাটা বা ক্ষত এড়াতে সতর্ক থাকুন এবং সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন।
১০. প্রাকৃতিক থেরাপি:
* কিছু প্রাকৃতিক উপাদান যেমন অ্যালোভেরা, ট্রি টি অয়েল, মধু, এবং ওটমিল সোরিয়াসিসের জন্য উপকারী হতে পারে। এগুলি ব্যবহার করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ।
১১. হিউমিডিফায়ার ব্যবহার:
* শীতকালে ঘরের বাতাস শুষ্ক হয়ে গেলে ত্বকও শুষ্ক হয়ে যায়, যা সোরিয়াসিসের উপসর্গকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই ঘরে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করুন।
১২. ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ:
* ধূমপান এবং মদ্যপান সোরিয়াসিসের উপসর্গকে আরও খারাপ করতে পারে। এগুলি থেকে দূরে থাকাই ভালো।
১৩. পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং ঘুম:
* পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং ভালো ঘুম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং মানসিক চাপ কমায়, যা সোরিয়াসিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
কিন্তু এই রোগ থেকে মুক্তির জন্য অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে
চর্মরোগ হলে কি কি খাওয়া নিষেধ
চর্মরোগের (ত্বকের রোগ) ক্ষেত্রে, সাধারণত কিছু খাবার এড়িয়ে চলা উচিত যা ত্বকের সমস্যা আরও বাড়াতে পারে। যদিও নির্দিষ্ট খাবারের তালিকা একজনের চর্মরোগের ধরন ও অবস্থার ওপর নির্ভর করে, তবুও কিছু সাধারণ নির্দেশনা দেওয়া যায়:
১। প্রক্রিয়াজাত ও তৈলাক্ত খাবার:
যেমন ফাস্ট ফুড, চিপস, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, এবং অন্যান্য ভাজা খাবার।
২। চিনি ও মিষ্টিজাতীয় খাবার:
অতিরিক্ত চিনি শরীরে ইনফ্লামেশন (প্রদাহ) বাড়িয়ে ত্বকের সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
৩। দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার:
কিছু লোকের ক্ষেত্রে দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার একজিমা বা ব্রণের সমস্যা বাড়াতে পারে।
৪। অ্যালকোহল ও ক্যাফেইন:
অ্যালকোহল ও ক্যাফেইন ত্বককে শুষ্ক করতে পারে এবং প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।
৫। প্রসেস করা মাংস:
যেমন সসেজ, বেকন, হ্যাম - এগুলি প্রক্রিয়াজাত মাংসের মধ্যে প্রিজারভেটিভস ও অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদান থাকতে পারে যা ত্বকের জন্য ক্ষতিকারক।
৬। অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী খাবার:
যেমন সামুদ্রিক মাছ, বাদাম, সয়াবিন, ইত্যাদি, যা কারো কারো ক্ষেত্রে ত্বকের অ্যালার্জির সৃষ্টি করতে পারে।
৭। মশলাদার খাবার:
মশলাদার খাবার যেমন লঙ্কা,গোলমরিচ, সরিষা ইত্যাদি অনেক সময় ত্বকের প্রদাহ বাড়াতে পারে। এটি বিশেষ করে রোসেসিয়া (Rosacea) বা ত্বকের লালাভাবের ক্ষেত্রে সমস্যাজনক হতে পারে।
৮। গ্লুটেন সমৃদ্ধ খাবার:
যেমন গম, বার্লি, ও রাই, যা কিছু লোকের ক্ষেত্রে ত্বকের সমস্যার কারণ হতে পারে, বিশেষ করে যাদের সিলিয়াক রোগ বা গ্লুটেন সেন্সিটিভিটি রয়েছে।
৯। সয়াবিন ও সয়া-জাতীয় খাবার:
কিছু মানুষের জন্য সয়াবিন অ্যালার্জির কারণ হতে পারে, যা ত্বকে র্যাশ বা একজিমার মতো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
১০। ডার্ক চকলেট:
যদিও চকলেটের কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা আছে, তবুও ডার্ক চকলেট কিছু মানুষের জন্য ব্রণ বা অন্যান্য ত্বকের সমস্যা বাড়াতে পারে।
১১। প্রসেসড খাবার:
প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন রেডি টু ইট খাবার, প্যাকেটজাত স্যুপ, ইনস্ট্যান্ট নুডলস ইত্যাদি শরীরে প্রদাহ বাড়ায়, যা ত্বকের সমস্যার কারণ হতে পারে।
১২। রেড মিট (লাল মাংস):
অতিরিক্ত রেড মিট খাওয়া শরীরে ইনফ্লামেটরি প্রতিক্রিয়া বাড়াতে পারে, যা সোরিয়াসিস বা একজিমার মতো চর্মরোগের ক্ষেত্রে ক্ষতিকর হতে পারে।
চর্মরোগের প্রকৃতি ও অবস্থার উপর নির্ভর করে এইসব খাবার খাওয়া বন্ধ বা সীমিত করা উচিত। ত্বকের যে কোনও সমস্যার জন্য ব্যক্তিগত খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের আগে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
সোরিয়াসিস রোগের ক্রিম
সোরিয়াসিস (Psoriasis) একটি দীর্ঘমেয়াদী চর্মরোগ, যা ত্বকে লাল, খসখসে ও খোঁচা দেওয়া জায়গায় সাদা বা রূপালী স্তর তৈরি করে। সোরিয়াসিসের চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন ধরনের ক্রিম ও মলম ব্যবহৃত হয়। কিছু সাধারণভাবে ব্যবহৃত সোরিয়াসিসের ক্রিমের নাম দেওয়া হলো:
১। ক্যালসিপোট্রিওল (Calcipotriol):
এটি একটি ভিটামিন ডি-এর সাদৃশ্য ওষুধ যা সোরিয়াসিসের চর্মের সেল গুলির বৃদ্ধি কমাতে সহায়ক।
২। কোর্টিকোস্টেরয়েড (Corticosteroids):
এটি প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং ত্বকের লালভাব ও খসখসে ভাব কমায়। বিভিন্ন মাত্রার কোর্টিকোস্টেরয়েড ক্রিম পাওয়া যায়, যেমন হাইড্রোকোর্টিসন (Hydrocortisone), বিটামেথাসন (Betamethasone) ইত্যাদি।
৩। টাজারোটিন (Tazarotene)
এটি একটি রেটিনয়েড যা ত্বকের কোষের বৃদ্ধির হার কমায় এবং প্রদাহ কমায়।
৪। ক্যালসিনিউরিন ইনহিবিটর (Calcineurin Inhibitors): যেমন ট্যাক্রোলিমাস (Tacrolimus) ও পিমেক্রোলিমাস (Pimecrolimus), যা প্রদাহ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
৫। কয়লাটার (Coal Tar):
এটি সোরিয়াসিসের লাল ভাব ও খসখসে ভাব কমাতে ব্যবহৃত হয়। তবে এটি সবসময় কার্যকর নয় এবং কিছু লোকের জন্য এটি সংবেদনশীলতা বাড়াতে পারে।
৬। জেসোরিস এম এস মলম (Zesoris MS Ointment) :
এই ঔষধ টি ব্যবহার করা হয় এলার্জি, ফুসফুসের মতো ত্বকের সংক্রমণ সংক্রমণ,প্রদাহ, লালত্ব এবং ফুসকুড়ি হ্রাস করে। জেসোরিস MS মলম (Zesoris MS Ointment) লোশন, ক্রিম সবরকম আকারের আকারে পাওয়া যায়।
যে কোনও ক্রিম ব্যবহারের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সোরিয়াসিসের ধরন এবং অবস্থার ওপর নির্ভর করে চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।
সোরিয়াসিস কি চুলকায়
হ্যাঁ, সোরিয়াসিসে সাধারণত চুলকানি হয়। সোরিয়াসিস একটি ত্বকের দীর্ঘমেয়াদী রোগ যা ত্বকে লাল এবং পুরু চামড়া তৈরি করে। এই ত্বকের অংশগুলো শুষ্ক, ফেটে যাওয়া এবং চুলকানি বা পুড়ে যাওয়ার মতো অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে। চুলকানি অনেক সময় হালকা থেকে শুরু করে তীব্র পর্যন্ত হতে পারে, যা রোগীর জন্য অস্বস্তিকর এবং যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে। কিছু ওষুধ এবং ত্বকের যত্নের উপায় চুলকানি এবং অন্যান্য লক্ষণগুলো কমাতে সহায়ক হতে পারে। সোরিয়াসিস (Psoriasis) একটি অটোইমিউন ত্বকের রোগ, যেখানে শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থার অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া ত্বকের কোষের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে।
সোরিয়াসিসে চুলকানি সাধারণত বিভিন্ন মাত্রার হতে পারে এবং বিভিন্ন কারণেও হতে পারে:
১। ত্বকের শুষ্কতা:
সোরিয়াসিসের কারণে ত্বক খুব শুষ্ক হয়ে যেতে পারে, যা চুলকানির একটি প্রধান কারণ।
২। প্রদাহ এবং সংক্রমণ:
ত্বকের প্রদাহের কারণে এই এলাকায় চুলকানি বাড়তে পারে। কোনও সংক্রমণ থাকলেও এটি আরও খারাপ হতে পারে।
৩। বাহ্যিক কারণ:
কিছু খাবার, অ্যালার্জি, আবহাওয়ার পরিবর্তন, মানসিক চাপ, বা কিছু রাসায়নিক পদার্থও সোরিয়াসিসের চুলকানির পরিমাণ বাড়াতে পারে।
চুলকানি নিয়ন্ত্রণের উপায়:
* ময়েশ্চারাইজার: ত্বককে সব সময় ময়েশ্চারাইজ করে রাখলে শুষ্কতা ও চুলকানি কমানো যায়।
* ওষুধ: চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী টপিক্যাল স্টেরয়েড, এন্টিহিস্টামিন, বা অন্য ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
*আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ: খুব গরম বা ঠান্ডা আবহাওয়া এড়িয়ে চলার চেষ্টা করা উচিত।
* নিয়মিত চিকিৎসা: সোরিয়াসিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং চুলকানি কমাতে নিয়মিত চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা মেনে চলা দরকার।
যদি চুলকানি খুব তীব্র হয় এবং কোনও ওষুধে কাজ না করে, তবে একজন ডার্মাটোলজিস্টের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।
সোরিয়াসিস এর আধুনিক চিকিৎসা
সোরিয়াসিস (Psoriasis) একটি দীর্ঘস্থায়ী ত্বকের রোগ যা ইমিউন সিস্টেমের কারণে হয় এবং এর আধুনিক চিকিৎসা বেশ কয়েকটি পদ্ধতির মাধ্যমে করা যেতে পারে। চিকিৎসা নির্ভর করে রোগের তীব্রতা, আক্রান্ত এলাকার পরিমাণ, এবং রোগীর অবস্থার উপর। আধুনিক চিকিৎসার কয়েকটি ধাপ নিচে দেওয়া হলো:
১। টপিকাল থেরাপি:
* কোর্টিকোস্টেরয়েড ক্রিম: এটি সোরিয়াসিসের প্রদাহ ও চুলকানি কমাতে সহায়ক।
* ভিটামিন ডি এনালগ: সেলসের বৃদ্ধির গতি কমাতে সাহায্য করে।
* রেটিনয়েডস: সেলসের অতিরিক্ত বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে।
২। ফোটোথেরাপি:
* UVB থেরাপি: এই পদ্ধতিতে UVB আলোর সাহায্যে ত্বকে প্রদাহ কমানো হয়।
* PUVA থেরাপি: পসোরালেন (একটি আলোক-সংবেদনশীল ঔষধ) এবং UVA আলো একসঙ্গে ব্যবহার করা হয়।
৩। সিস্টেমিক থেরাপি:
* মিথোট্রেক্সেট: এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমাতে সহায়ক।
* সাইক্লোস্পরিন : ইমিউন সিস্টেমকে দমন করতে ব্যবহৃত হয়।
* রেটিনয়েডস : সেলসের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে।
৪। বায়োলজিক্স থেরাপি:
এটি বর্তমানে সবচেয়ে উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতি। এটি সরাসরি ইমিউন সিস্টেমের ওপর কাজ করে। কয়েকটি জনপ্রিয় বায়োলজিক্স ঔষধ হলো:
* TNF-a ইনহিবিটরস: যেমন এটানারসেপ্ট, ইনফ্লিক্সিম্যাব।
* IL-17 ইনহিবিটরস: যেমন সেকুকিনুম্যাব।
* IL-23 ইনহিবিটরস: যেমন উস্টেকিনুম্যাব।
৫। লাইফস্টাইল পরিবর্তন:
* মানসিক চাপ কমানো, সুষম খাদ্যগ্রহণ, নিয়মিত ব্যায়াম ইত্যাদি সোরিয়াসিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
এসব উপায়ে সোরিয়াসিস রোগের চিকিৎসা করা হয়। আপনার রোগের ধরণ অনুযায়ী চিকিৎসক সেবা দিবেন।
সোরিয়াসিস কেন হয়
সোরিয়াসিস একটি দীর্ঘস্থায়ী ত্বকের রোগ, যা শরীরের ইমিউন সিস্টেমের সমস্যা থেকে সৃষ্ট হয়। এটি তখন ঘটে যখন শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অস্বাভাবিকভাবে সক্রিয় হয়, ফলে ত্বকের কোষগুলি দ্রুত বৃদ্ধি পায়। সাধারণত, ত্বকের কোষগুলি পরিপূর্ণ হতে এবং ত্বকের পৃষ্ঠে উঠে আসতে কয়েক সপ্তাহ সময় নেয়, কিন্তু সোরিয়াসিসের ক্ষেত্রে এটি মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে ঘটে। ফলে ত্বকে লালচে, শুষ্ক এবং ফাটা দাগ দেখা যায়।
সোরিয়াসিসের নির্দিষ্ট কারণ এখনও পুরোপুরি জানা যায়নি, তবে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো এটির জন্য দায়ী হতে পারে:
১। জেনেটিক ফ্যাক্টর:
পরিবারের মধ্যে সোরিয়াসিসের ইতিহাস থাকলে এটি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
২। ইমিউন সিস্টেমের ত্রুটি:
শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যদি ভুল করে ত্বকের কোষগুলোকে আক্রমণ করে তবে, সোরিয়াসিস হতে পারে।
৩। পরিবেশগত প্রভাব:
স্ট্রেস, সংক্রমণ, ত্বকের আঘাত বা কিছু ওষুধ সোরিয়াসিসের উপসর্গকে উস্কে পারে।
সোরিয়াসিস এর সাবান :
সোরিয়াসিস (Psoriasis) হলো একটি দীর্ঘমেয়াদী ত্বকের সমস্যা যেখানে ত্বকে লাল ও শুষ্ক দাগ তৈরি হয়। সোরিয়াসিসের জন্য বিশেষ ধরনের সাবান ব্যবহারের প্রয়োজন হতে পারে যা ত্বককে শুষ্ক ও খসখসে হওয়া থেকে রক্ষা করে এবং শীতলতা প্রদান করে। সোরিয়াসিসের জন্য কিছু সাধারণ সাবান বিকল্প:
১। Tar-Based Soap: কোয়াল টার সাবান, যা চুলকানি কমাতে এবং ত্বকের শুষ্কতা থেকে মুক্তি পেতে সহায়ক।
২। Moisturizing Soap: অতিরিক্ত ময়েশ্চারাইজারযুক্ত সাবান যেমন ডোভ বা অলিভ অয়েলযুক্ত সাবান, যা ত্বককে নরম রাখতে সাহায্য করে।
৩। Fragrance-Free Soap: সুগন্ধিবিহীন সাবান ব্যবহার করা উচিত, কারণ সুগন্ধি অনেক সময় ত্বকের উত্তেজনা বৃদ্ধি করতে পারে।
৪। Aloe Vera Soap: অ্যালোভেরা সমৃদ্ধ সাবান ত্বকের শীতলতা প্রদান করে এবং ত্বকের প্রদাহ কমায়।
তবে, সোরিয়াসিসের জন্য সঠিক সাবান নির্ধারণ করতে একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া ভালো।
মাথায় সোরিয়াসিস থেকে মুক্তির উপায়
মাথায় সোরিয়াসিস থেকে মুক্তি পেতে কিছু কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী ত্বকের সমস্যা, তবে নিয়মিত চিকিৎসা এবং সঠিক যত্নে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। এখানে কয়েকটি পরামর্শ দেওয়া হলো:
১. মেডিকেল চিকিৎসা:
* স্টেরয়েড ক্রিম বা লোশন:
ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী স্টেরয়েডযুক্ত ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করতে পারেন।
* সালিসাইলিক অ্যাসিড: এটি মৃত চামড়া সরাতে সাহায্য করে এবং নতুন ত্বক গঠনে সহায়ক।
* টার শ্যাম্পু: সোরিয়াসিস নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ধরনের টার শ্যাম্পু ব্যবহৃত হয়।
২. ঘরোয়া পদ্ধতি:
* নারকেল তেল: মাথার ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করতে এবং শুষ্কতা কমাতে এটি ব্যবহার করতে পারেন।
* অ্যালোভেরা: অ্যালোভেরা জেল মাথার ত্বকে লাগালে এটি সুর”য় এবং খুশকি দূর করে।
* ভিনেগার ধোয়া: এক ভাগ ভিনেগার এবং তিনভাগ পানি মিশিয়ে মাথার ত্বক ধুয়ে নিতে পারেন, যা খুশকির পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে।
৩. জীবনধারার পরিবর্তন:
* মানসিক চাপ কমানো:
মানসিক চাপ সোরিয়াসিসকে বাড়িয়ে তোলে, তাই যোগব্যায়াম, মেডিটেশন, বা অন্যান্য মানসিক চাপ কমানোর উপায় গ্রহণ করতে পারেন।
* স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: তাজা ফল ও সবজি, ফ্যাটি ফিশ, এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাটযুক্ত খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুন।
৪। ডাক্তারের পরামর্শ:
* যেহেতু সোরিয়াসিস দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা, তাই এটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিন।
৫। নিয়মিত স্ক্যাল্প পরিচর্যা:
* হালকা ম্যাসাজ: স্ক্যাল্পে হালকা তেল ম্যাসাজ করতে পারেন যা রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং ত্বকের ময়েশ্চারাইজেশন করে।
* শ্যাম্পু পরিবর্তন: সাধারণত সালিসাইলিক অ্যাসিড বা টার-যুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়। নিয়মিত শ্যাম্পু ব্যবহার করলে ত্বকের মৃত কোষ সরানো সহজ হয়।
৬। প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার:
* দুধ ও মধুর মিশ্রণ: দুধ এবং মধু একসাথে মিশিয়ে মাথার ত্বকে লাগানো যেতে পারে। এটি ত্বককে নরম এবং ময়েশ্চারাইজ রাখে।
* টি ট্রি অয়েল: এটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্যযুক্ত, যা মাথার ত্বকের প্রদাহ কমাতে সহায়ক।
* ওটমিল পেস্ট: ওটমিল ত্বককে শান্ত করে এবং শুষ্কতা দূর করতে সাহায্য করে।
৭। খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ:
* ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড: ফ্যাটি ফিশ, যেমন : স্যালমন বা সার্ডিন, এবং ফ্ল্যাক্সসিড ওমেগা-৩ এর চমৎকার উৎস। এটি প্রদাহ কমাতে সহায়ক।
* অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার: ফল, সবজি, এবং বাদাম অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষা করে।
৮। হাইড্রেশন বজায় রাখা:
প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করুন। এটি আপনার ত্বককে হাইড্রেটেড রাখে এবং সোরিয়াসিসের শুষ্কতা কমাতে সহায়তা করে।
৯। আলো থেরাপি :
* UVB আলো থেরাপি: এটি একটি সাধারণ চিকিৎসা পদ্ধতি যেখানে UVB আলো ব্যবহার করে ত্বকের কোষগুলির বৃদ্ধি ধীর করা হয়। তবে এটি চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে করা উচিত।
* সূর্যের আলো: কিছু সময় সূর্যের আলো ত্বকে লাগানো যেতে পারে, যা প্রাকৃতিকভাবে সোরিয়াসিস কমাতে সাহায্য করে। তবে খুব বেশি রোদে থাকা থেকে বিরত থাকুন।
১০। নতুন উদ্ভাবনী ঔষধ:
সোরিয়াসিসের জন্য উদ্ভাবনী ঔষধ যেমন টার্গেটেড থেরাপি, মোনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি, এবং পেপটাইড ভ্যাকসিন তৈরি করা হচ্ছে, যা সোরিয়াসিসের লক্ষণগুলো নিয়ন্ত্রণে কার্যকর হতে পারে।
এই পদ্ধতিগুলোর মাধ্যমে মাথার সোরিয়াসিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব, তবে রোগটি ব্যক্তিভেদে বিভিন্নভাবে প্রকাশ পেতে পারে। তাই সঠিক চিকিৎসা এবং যত্ন নেওয়ার জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।
সোরিয়াসিস এর লক্ষণ
সোরিয়াসিস হলো ত্বকের একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রদাহজনিত রোগ যা ত্বকে প্রভাব ফেলে। এর প্রধান লক্ষণগুলো হলো:
১। লালচে বা গোলাপি ত্বকের অংশ:
আক্রান্ত এলাকাগুলো লালচে বা গোলাপি হতে পারে এবং এই অংশগুলো সাদা বা রুপালি আঁশ দিয়ে আচ্ছাদিত হয়।
২। আঁশযুক্ত ত্বক:
ত্বকে পুরু ও আঁশযুক্ত অংশ দেখা যায় যা সহজেই খোসা উঠে যায়।
৩। শুকনো ও ফাটলযুক্ত ত্বক:
আক্রান্ত ত্বক অনেক সময় শুকনো ও ফাটল দেখা দিতে পারে, যা থেকে রক্তপাতও হতে পারে।
৪। চুলকানি ও জ্বালা:
সোরিয়াসিস আক্রান্ত ত্বক চুলকাতে পারে এবং ব্যথা বা জ্বালাও অনুভূত হতে পারে।
৫। নখের পরিবর্তন:
সোরিয়াসিস নখে প্রভাব ফেলতে পারে, নখ পুরু হয়ে যাওয়া, ফাটল দেখা দেয়া, বা নখের রঙ পরিবর্তন হওয়া।
৬। যৌথ ব্যথা:
কিছু ক্ষেত্রে, সোরিয়াসিসের সাথে সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিসও হতে পারে, যা জয়েন্টে ব্যথা এবং ফোলাভাব সৃষ্টি করে।
সোরিয়াসিসের লক্ষণগুলোর তীব্রতা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে, এবং মাঝে মাঝে এই লক্ষণগুলো বাড়ে বা কমে।
শেষ কথা: চর্মরোগ হলে কি কি খাওয়া নিষেধ - মাথায় সোরিয়াসিস থেকে মুক্তির উপায়
পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা চর্মরোগ হলে কি কি খাওয়া নিষেধ - মাথায় সোরিয়াসিস থেকে মুক্তির উপায় জানতে পারলেন । মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন তাহলে আশা করি আপনার কোন সমস্যা হওয়ার কথা না চর্মরোগ হলে কি কি খাওয়া নিষেধ - মাথায় সোরিয়াসিস থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে জানতে পরলেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url